লক্ষ্মীপুরে মেঘনাপাড়ের ‘শিশু জেলেরা’ কেমন আছে?
- ১৯:৪৭
- উপকূল আজ, উপকূল সংবাদ, জীবনধারা, নারী ও শিশু, মৎস্যজীবী, শিক্ষাদীক্ষা, সর্বশেষ
- ৪১৪
কমলনগর, লক্ষ্মীপুর : ১২ বছর বয়সের রাসেদ এক দুর্দান্ত মারকুটে ক্রিকেট খেলোয়াড়। চৌকস এই ছেলেটির পড়ালেখা চলছিলো উপকূলীয় জেলা লক্ষ্মীপুরের কমলনগরের উত্তর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যাঙ্গনে পড়ালেখাটাও বেশ ভালো ছিলো ওর। পাশাপাশি বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণেও অর্জন করেছে অনেক পুরস্কার। সে যখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ছিলো তখনই দরিদ্রতার সূত্র এনে তাকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় মেঘনার মোহনায় ইলিশ শিকারের জন্য।
সে এখন নিষেধাজ্ঞা ছাড়া নিয়মিত নদীতে যায়। ইলিশ ধরে পরিবারের আর্থিক সংকট মোকবেলার লড়াই চলছে তার। ইলিশ ধরা নিষেধাজ্ঞার সময় ক্রিকেট খেলে গ্রামের কিশোরদের সাথে। খুব ভালো বল করে, মারকুটে বেটিং এবং একজন ভালো ফিল্ডার বটে সে। ওতো এখন জেলে! তার স্বপ্নটা তো নদীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ!
অথচ এই রাসেদ শিক্ষাঙ্গনে পড়ালেখা করলে হতে পারতো বর্তমান যুগের তামিম ইকবাল ও কাটার মাস্টার মোস্তাফিজের মতো উজ্জ্বল তারকা কিংবা একজন আদর্শ ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তার বেড়ে ওঠাতো আমাদের অজ্ঞতা আর অসেচতনতায় কারারুদ্ধ। যদি একই এলাকার আরেকজন কিশোর শরিফের কথা বলি। তার গল্পটাও এমনি। অর্থ উপার্জনের জন্য ৩য় শ্রেণি থেকে নদীতে গিয়ে পড়ালেখা থেকে ছিটকে ঝরে পড়া তার। কখনো নৌকায় ইলিশ শিকার, কখনো ইলিশ ধুয়ে পরিষ্কার করা আবার কখনোও-বা বরফ কলে কাজ করেছিলো।
২০১৩ সালে কমলনগরের মতিরহাটে বরফ কলে কাজ করতে গিয়ে বরফ মেশিনের ভিতরে হারালো বাম হাত! সে এখন পঙ্গু! মেঘনাতীরের মতিরহাটে গিয়ে দেখা তার সঙ্গে। কিছুক্ষণ গল্প হলো। তাকে নিয়ে এর আগেই লেখালেখি হয়েছে।
পরিস্থিতির শিকার হওয়া মেঘনার আরেক শিশু জেলে রিয়াদ (১১) জানায়, আমার বাবা মরে গেছে। তাই একটি ইঞ্জিনবিহীন নৌকা দিয়ে নদীতে মাছ শিকার করি, সংসারের খরচ চালায়। তোমার কি পড়ালেখার ইচ্ছে আছে? জানতে চাইলে উত্তরে সে বললো, ইচ্ছা ছিলো, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছি। কিন্তু আমার খাতা-কলম কিনে দেওয়ার মতো কাউকে পাইনি।
বিষয়টি নিয়ে এক পর্যায়ে কথা হয় লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, আমি উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি, উপজেলার শিশু জেলেদের চিহ্নিত করে, তাদেরকে বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেওয়ার জন্য। কেবল মাত্র প্রকৃত জেলেরাই নদীতে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। জেলে শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠিয়ে যদি অভিভাবকরা তাদের পড়ালেখার খরচ চালাতে না পারে, তাহলে তাদের সার্বিকভাবে সহযোগিতা করতে হবে। জেলেদের সাথে আমি যে সভাগুলো করে থাকি, সব সভাতেই শিশুদের যেন কোনভাবে ইলিশ শিকারের জন্য নদীতে না নেওয়া হয় সেই ম্যাসেজটা পৌঁছে দিয়েছি।
জেলা তথ্য অফিসার মোঃ আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, শিশু জেলেদের তালিকা তৈরি করে অভিভাবকদের সচেতনতার মাধ্যমে তাদের বির্দ্যাজনের জন্য পাঠাতে হবে। আমাদের তথ্য অফিস থেকে জেলেদের নিয়ে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রমে জেলেদের অভিহিত করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ জিল্লুর রহমান চৌধুরী বলেন, আমাদের ভবিষ্যতের কর্ণধারদের প্রতি অবশ্যই জোরালো দৃষ্টি রাখতে হবে অভিভাবকের। কেননা ওদের বিকাশে বাধাগ্রস্ত হলে কোনভাবেই উন্নয়ন সম্ভব নয়।
// প্রতিবেদন/০১০৫২০১৭//
