ভিক্ষা ছেড়ে কিশোর শুকুর বাদাম বিক্রেতা, স্বপ্ন বড় ব্যবসায়ী হওয়ার
- ১৩:০১
- অর্থ বানিজ্য শিল্প, উপকূল আজ, উপকূল সংবাদ, খুলনা জেলা, ঘটনাপ্রবাহ, নারী ও শিশু, পশ্চিম-উপকূল, শীর্ষ সংবাদ, সর্বশেষ
- ৭৪০
খুলনা : শুকুর এখন আর ভিক্ষার জন্য কারো কাছে হাত পাতে না। যদিও ভাজা বাদাম ফেরী করে, তবুও এটি তার ব্যবসা। এছাড়া এক বেলা সে সংবাদপত্র বিক্রি করে। এই ব্যবসা করে সে এক দিন বড় ব্যবসায়ী হতে চায়। পুনরায় সে স্কুলে যেয়ে পড়া লেখাও করতে চায়। এভাবে শুকুর সমাজের একজন হতে চায়। এ জন্য জেলা প্রশাসনের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে সে।
নাম শুকুর আলী, বয়স ১২ বছর। পিতার নাম কামাল শেখ, মা আমেনা বেগম। থাকে সোনাডাঙ্গা ইউসেফ স্কুলের পর্শ্বের বস্তিতে। তিন ভাইয়ের মধ্যে মা-বাবার দ্বিতীয় সন্তান সে। ওয়ার্ল্ড ভিশন পরিচালিত স্কুলে তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে শুকুর। সে বলে কিছু বুঝতে শেখার আগেই বাবা তাদের ত্যাগ করে অন্যত্র ঘর বাঁধে। তারপর জন্ম হয় ছোট ভাইয়ের। বড় ভাই প্রায় ২১ বছরের, সেও আলাদা থাকে। তাই তিন বছরের ছোট ভাই ও মাকে নিয়ে সংসার তার।
চার বছর আগে পড়ালেখার অধ্যায় চুকিয়ে সে নেমে পড়ে ভিক্ষাবৃত্তিতে। আট বছর বয়সী ছোট শিশু কাজ করতে অপারগ থাকায় কেউ তাকে কাজে নিতে চায়নি। মায়ের পেটে ছোট ভাই থাকার কারনে মা তখন বাসাবাড়ী কিংবা অন্যকোন কাজ করতে পারতো না। মুলতঃ এমন বাস্তবতায় ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় তাকে টেনে আনে। তবে আর না, অনেক গালাগালি খেয়েছি মানুষের কাছে। ভিক্ষার বদলে অনেকে শরীরে আঘাতও করেছে। এমন কথা বলছিলো শুকুর আলী।
সম্প্রতি খুলনা জেলা প্রশাসন জেলাকে ভিক্ষুকমুক্ত করার জন্য মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর অংশ হিসেবে এক জরিপে জেলায় ২ হাজার ৯০১ জন মানুষ সনাক্ত হয়েছে যারা ভিক্ষাবৃত্তির সাথে সম্পৃক্ত। তাদের সকলকে ভিক্ষাবৃত্তি ছাড়ার জন্য পর্যায়ক্রমে সহায়তার করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়। ‘ভিক্ষাবৃত্তিকে না বলুন’ এই শ্লোগানে খুলনা জেলার ৬৪৩ জন ভিক্ষুককে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের জন্য গত ২৫ নভেম্বর সার্কিট হাউজ চত্ত¡রে বিভিন্ন উপকরণ বিতরণ করা হয়েছে। যার মধ্যে ছিল সেলাই মেশিন, ভ্যান, মুদিদোকান, চা-দোকান, নতুন কাপড়ের দোকান, বাদাম বিক্রির সরঞ্জাম, রেশন ও নগদ অর্থসহ ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন মালামাল।
শুকুর ছিল এই ৬৪৩ জনের এক জন। বয়স হিসেবে সে পেয়েছে বাদাম বিক্রি করার ঝুঁড়ি, ডালা, পাল্লা, পোড়েন ও কাঁচা বাদাম ক্রয় করার জন্য নগদ ৩শ’ টাকা। এই নিয়েই শুরু হয় শুকুরের ব্যবসা। শুকুর বলে, আগে আমি সকলে কাছাকাছি যেয়ে হাত পাততাম ভিক্ষা নেওয়ার জন্য। এখন আমাকে যাওয়া লাগে না, বরঞ্চ আমাকে সকলে ডাকে বাদাম কেনার জন্য। এখন আমার সম্মানও বেড়েছে। কারণ আমাকে কেউ আর ভিখারী বলেনা; বাদাম বিক্রেতা বলে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে শুকুর বলে, আমি আর ভিক্ষা করবো না। বাদাম বিক্রি করে বড় ব্যবসায়ী হতে চাই। একটা দোকান দিতে চাই আমি। এছাড়া পুনরায় স্কুলে ভর্তি হতে চায় শুকুর। কারণ বড় ব্যবসায়ী হতে হলে আরও পড়ালেখা করার প্রয়োজন বলেও মনে করে শুকুর। আর একমাত্র ছোট ভাইকে পড়ালেখা করিয়ে মানুষের মতো মানুষ করার স্বপ্ন দেখে সে। তার এই স্বপ্ন দেখিয়েছে খুলনা জেলা প্রশাসন। এজন্য বর্তমান জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসানকেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে শুকুর আলী।
// প্রতিবেদন/১০১২২০১৬//
