ছদ্মবেশ ধারণ করেও নাজমার শেষ রক্ষা হল না!
- ০১:২৩
- উপকূল সংবাদ, ঘটনাপ্রবাহ, দুর্ঘটনা ও অপরাধ, নারী ও শিশু, পশ্চিম-উপকূল, বাগেরহাট জেলা, শীর্ষ সংবাদ
- ২০২
শরণখোলা (বাগেরহাট) : ছদ্মবেশ ধারণ করেও শেষ রক্ষা হল না নাজমার। জীবিকার তাগিদে নামতে হয়েছিল রিক্সা চালকের মত কঠোর শ্রমে। সেখানে তো নারীর পক্ষে কাজ করা সহজ নয়। নাম আর চেহারা বদল করে সেই অসাধ্যকে সাধ্য করেছিল নাজমা। নাম বদলে রাখা হয়েছিল নাজমুল। সবাই চিনতো এই নামেই। বড় চুল কেটে ছোট করে পুরুষের পোশাক পড়ে ‘নাজমুল’ নামধারী নাজমা নেমে পড়ে রিক্সা নিয়ে। নিতান্তই জীবিকার টানে রিক্সা চালাতো শরণখোলায়। আর সেখানেও আসে বাঁধা।
জীবন সংগ্রামে হেরে গিয়ে এক লম্পটের লালসার শিকার হয়ে এখন কুমারী মাতা নাজমা। সোমবার (২৪ আগস্ট) দিনগত রাত ১টার দিকে বাগেরহাটের শরণখোলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সে একটি কন্যা সন্তান জন্ম দিয়েছে। নাজমাকেএলাকার সবাই চিনতো নাজমুল বলে। আর সে কারণে নাজমুল নামধারী এই নাজমার সন্তান প্রসবের পর এলাকায় ‘পুরুষের সন্তান হয়েছে’ বলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
নাজমা আক্তার ওরফে নাজমুল (১৫) উপজেলার খোন্তাকাটা গ্রামের মৃত আ. খালেকের মেয়ে। নাজমাকে এই সর্বনাশ করার অপরাধে দায়ী চিহ্নিত করে মৃত শামছু তালুকদারের ছেলে ও উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের হার্ডওয়ার ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম তালুকদারকে (৩৮) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
শরণখোলায় নাজমাকে অনেকেই নাজমুল নামে চিনতো। নাজমা জানায়, চার বছর বয়সে তার বাবা মারা যায়। মা মরিয়ম বেগম বছর পাঁচেক আগে অন্যাত্র বিয়ে করে তাকে ছেড়ে চলে যায়। সব হারিয়ে নাজমার আশ্রয় হয় বৃদ্ধা দাদীর কাছে। এরপর গত এক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে সে বেছে নেয় রিকশা-ভ্যান চালানোর সংগ্রাম। একারনে মানুষরূপী পশুদের হাত থেকে বাঁচতে এই পেশায় কাজ করার জন্য নাজমা পুরুষের ছদ্মবেশ ধারণ করে। নিজের নাম রাখে নাজমুল। কিন্তু এরপরও সে নিজেকে রক্ষা করতে পারেনি।
উপজেলা সদর রায়েন্দা বাজারের হার্ডওয়ার ব্যাবসায়ী রফিকুলের লালসার শিকার হয় নাজমা। আবশেষে সে অন্তঃসত্তা হয়ে পড়ে। একথা বহুবার বলা হলেও রফিকুল তাকে গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানায়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় প্রসব বেদনা নিয়ে হাসপাতালে ছুটে আসে নাজমা। রাত ১টায় ফুঁটফুঁটে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করে সে।
উপজেলাস্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অসীম কুমার সমাদ্দার জানান, নাজমা ও তার মেয়ে সুস্থ আছে। পুরুষ ছেলের সন্তান হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ায় সকাল থেকে শত শত মানুষ হাসপাতালে ভিড় করছে। এখন ভিড় সামলাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে।
থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম জানান, নাজমার স্বীকারোক্তিমতে ওই রাতেই থানায় একটি ধর্ষণ মামলা হয়েছে। মামলার আসামী রফিকুলকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
//শেখ মোহাম্মদ আলী/উপকূল বাংলাদেশ/শরণখোলা-বাগেরহাট/২৫০৮২০১৫//
