সামনে ঈদ, পাওয়া না পাওয়ার গল্প
- ১৩:৩০
- উপকূল আজ, উপকূল সংবাদ, উৎসব-পার্বণ, নারী ও শিশু, পটুয়াখালী জেলা, প্রধান প্রতিবেদন, ফিচার, মধ্য-উপকূল, শীর্ষ সংবাদ, সর্বশেষ
- ১১৩৫
কলাপাড়া, পটুয়াখালী : একটি নতুন কাপড় ও সন্তানদের জন্য কিছু খাবারের জন্য এক বছরের জান্নাতীকে কোলে নিয়ে আট বছরের সাইফুলের হাত ধরে প্রায় ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে পাঁচ মাইল কর্দমাক্ত রাস্তা পায়ে হেঁটে এ গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম ছুটে বেড়িয়েছেন বিধবা ফরিদা বেগম (৪৩)।
কিন্তু এক দুপুরে তার ভাগ্যে কিছুই জোঁটেনি। ছোট্র কোলের শিশু ক্ষুধার জন্য কান্না করলেও একগ্লাস পানি ছাড়া কিছুই খাওয়াতে পারেণ নি ৫/৬ ঘন্টায়। এবার তিন সন্তানকে নিয়ে হয়তো তাঁর বাড়িতে ঈদ উৎসব হবে না এ চিন্তায় পথের মাঝেই বসে পড়লেন। কলাপাড়ার ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের পূর্ব ডালবুগঞ্জ গ্রামে বাড়ি ফরিদা বেগমের।
একই ইউনিয়নের একটি গ্রাম সুখডুগি। নামে সুখী গ্রাম হলেও ৮৬ বছরের জয়গোন বিবির শেষ সুখের স্পর্শের স্মৃতি এখন মনে নেই। লাঠি ভর করে গ্রাম গ্রাম ঘুরে এতোদিন ভিক্ষা করে নিজের জন্য দু’মুঠো ভাতের জোগান দিতে পারলেও বার্ধক্য জড়িয়ে ধরায় এখন এক পা চলতেও কষ্ট হয়। তিনি ঈদে একটু সুখের জন্য ভিক্ষায় বের হলেও সারাদিনে পেয়েছেন একটি নতুন শাড়ি। কিন্তু সন্ধায় ইফতারে কি খাবেন তার জোগান হয়নি দুপুর পর্যন্ত।
একই ইউনিয়নের মেহেরপুর গ্রামের আনোয়ারা বেগম(৮৩) একটি নতুন শাড়ি পেয়েছেন সারাদিনে। কিন্তু ঈদে একটু সেমাই কিংবা গরুর মাংস দিয়ে পেট ভরে ভাত খাবেন এজন্য পথে নেমেছিলেন। কিন্তু তার ভাগ্যেও কিছু জোটেনি।
ডালবুগঞ্জ ইউনিয়নের এই তিন বিধবা সংগ্রামী নারী ফরিদা বেগম, জয়গোন বিবি ও আনোয়ারা বেগম এক সময়ে সুখের দিন কাটালেই স্বামীর মৃত্যুর তাদের এখন প্রতিদিন জীবন-মৃত্যুর সাথে সংগ্রাম করতে হচ্ছে।
ফরিদা বেগমের আর্তি-দুইডা পোলা ইসকুলে পড়ে। কিন্তু দুইডা ছেড়া গেঞ্জি ও একটা পুরান জামা ছাড়া আর কিছুই নাই অগো। হেইয়াও গত বছর মাইনষে দিছিলো। এ্যাহন পাড়ার হগলডি দেহি হ্যাগো পোলাপানের লাইগ্যা নতুনতা কেনে। কিন্তু মুইতো ভাত খাইতেই পারিণা, পোলামাইয়ার নতুন কোর্তা ক্যামনে কিনমু। মোগো তো কেই দেওয়ারও নাই। আমনেরাই কন, আমরা ক্যামনে ঈদ করমু। শেষ কবে একটু মাংস খেয়েছেন তা বলতে পারছে না চতুর্থ শ্রেণিতে পড়–য়া ইব্রাহিম ও তৃতীয় শ্রেণিতে পড়–য়া সাইফুলের।
তবে জয়গোন বিবি ও আনোয়ারা বেগমকে ডালবুগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান একটি করে কাপড় দিয়েছেন। জয়গোন বিবি বলেন, ৩ মাসের পোলা রাইখ্যা স্বামী মরছে। ১৬ বছর আগে একমাত্র পোলা খলিল ও মইর্যা গ্যাছে। এ্যাহন রাস্তাই আমার ঠিকানা। রাস্তায় হাঁটতে পারলে দুইডা খাওন পাই। কিন্তু রোগব্যাধী শরীলে বাসাবান্দায় এ্যাহন হাডতে পারিনা। কেডা আইয়া আমারে খাওয়াইবে কন। এ্যাহন কি আর দ্যাশে হেই মানুষ আছে। আর ঈদ আইলে আগের কথা মনে পড়ে। স্বামী থাকাকালীন কতোই কিছু করতাম, আর এ্যাহন দরজার দিকে চাইয়া থাহি কেউ খাবার নিয়া আইলো কিনা।
//প্রতিবেদন/উপকূল বাংলাদেশ/০৪০৭২০১৬//
